সেই সুপ্রাচীন কাল থেকে মানুষের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে তেল। কেবল রান্নার কাজে নয়, রূপচর্চার ক্ষেত্রেও তেলের আছে সমান দাপট। তেল যতটা উপকারী চুলের যত্নে, ঠিক ততটা উপকারী ত্বকের যত্নেও। তাই তো আধুনিক যুগের এতসব রূপচর্চার উপাদানের ভিড়েও তেলের আবেদন কমেনি একবিন্দু।আমাদের দেশে মূলত যে তেলগুলো তৈরি ও ব্যবহার করা হয়, সেগুলো হচ্ছে- নারিকেল তেল, সরিষার তেল, তিল ও তিসির তেল, নিম তেম ইত্যাদি। তবে তৈরি না হলেও সাম্প্রতিক কালে অলিভ ওয়েল বা বাদাম তেল, সূর্যমুখী তেল, ক্যাস্টর ওয়েল, ল্যাভেন্ডার তেল ইত্যাদির ব্যবহার উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে। আসুন জেনে নেই আমাদের দেশে কয়েকটি বহুল ব্যবহৃত তেল ও সৌন্দর্য- স্বাস্থ্য রক্ষায় তাদের উপকারিতা ও ব্যবহার সম্পর্কে।
নারিকেল তেল:
তেলের কথা বলতে গেলে আমাদের দেশে সর্বপ্রথম যে নামটি মাথায় আসবে, তা হলো নারিকেল তেল। চুলের যত্নে শত শত বছর যাবত ব্যবহৃত হয়ে আসছে এই তেল। নোয়াখালীসহ যে সকল অঞ্চলে নারিকেল বেশী জন্মায়, সেইসব অঞ্চলে রান্নাতেও ব্যবহার করা হয় এই তেল। তবে সব চাইতে বহুল ব্যবহার কেশ চর্চাতেই।
নারিকেল তেলে মেথি ভিজিয়ে রেখে সেই তেল ব্যাবহারে চুলের গোড়া মজবুত হয়। এ ছাড়া ত্বকে মালিশ করলেও উপকার পাওয়া যায়। ত্বকের ব্লিচ হিসেবে নারকেল তেল যে ব্যবহৃত হতে পারে তা আমরা অনেকেই জানি না। নারকেল তেল দিয়ে নিয়মিত ম্যাসাজ করলে ত্বক উজ্জ্বল হয়। পিগমেন্টেশনের সমস্যা দূর করে। চোখের পাতায় নিয়মিত নারিকেল তেল লাগালে আখিপল্লব দীর্ঘ ও ঘন হয়।
সরিষার তেল:
একটা সময় ছিল, যখন এই দেশের ঘরে ঘরে রান্নায় ব্যবহৃত হতো এই তেল। কালের বিবর্তনে সেই দিন আর নেই, তবে এখনও বিশেষ বাঙালি রান্নায় সরিষার তেল চাই-ই চাই। নানান গুনগত মানের কারণে এই তেল শরীরের জন্য উপকারী। ছোট বাচ্চাদের গায়ে সরিষার তেল মাখিয়ে ম্যাসাজ করা তো বহু প্রচলিত দৃশ্য আমাদের দেশে। সাইনাসের রোগীদের জন্যও উপকারী বিবেচিত হয়।
সরিষার তেল গরম করে মাথার ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করুন। দেখবেন খুশকি একেবারেই সেরে যাবে। সরিষার তেল ত্বকে আর্দ্রতা জোগাতে পারে। শীতে ফাটা ত্বকে এর মালিশ খুব উপকারী। ঠান্ডার সময় উষ্ণতাও দেয় এই তেল। ঠান্ডা, কফ, মাথাব্যথা—এসব কমাতে সরিষার তেলের ম্যাসাজ উপকারী।
তিলের তেল:
ছোট ছোট সাদা ফুল থেকে হয় কালচে তিলের দানা। এ থেকে হয় তিলের তেল। তিলের যেমন পুষ্টিগুণের অভাব নেই, তেমনি নেই তিলের তেলেরও। রান্নায়ও তিলের তেলের সমান গুরুত্ব।
তিলের তেলের ব্যবহারে ত্বক হয় সজীব। যাঁদের ত্বকে রোদে পোড়া ভাব রয়েছে, তাঁদের ওই পোড়া দাগ দূর করতে পারেন এ তেল ম্যাসাজের মাধ্যমে। এই তেল ব্যবহারে চুল পড়া বন্ধ হয়। মাথাও ঠান্ডা থাকে। শীতের সময় রাতে ঘুমানোর আগে সামান্য কর্পূর তিলের তেলের সঙ্গে মিশিয়ে ত্বকে ম্যাসাজ করলে উষ্ণতা পাওয়া যায়। তিলের তেল চুলের খুশকিও দূর করে। এ জন্য সপ্তাহে একবার নারকেলের তেলের সঙ্গে মিশিয়ে চুলে ম্যাসাজ করতে পারেন।
তিসির তেল:
ত্বকের কোমলতা ফিরিয়ে আনতে ত্বকে ম্যাসাজ করতে পারেন তিসির তেল। এতে ত্বকের ভাঁজগুলো ধীরে ধীরে কমে যায়। তিসির তেল খেতেও পারেন। এতে মেধা বাড়ে। চোখের দৃষ্টির জন্যও ভালো।
অলিভ অয়েল বা জলপাই তেল:
শুষ্ক ত্বক প্রাণ ফিরে পায় অলিভ অয়েলের গুণে। অলিভ অয়েল অতিরিক্ত শুষ্ক ও ছোপ ছোপ ত্বক কোমল ও মসৃণ করে তোলে। এই তেল মেকাপ রিমুভার হিসাবে খুবই সহায়ক । জলপাই তেল,১০ ফোঁটা ল্যাভেন্ডার তেল মিশিয়ে হালকা গরম করে এর মধ্যে দুটি ভিটামিন ‘ই’ ক্যাপসুল মিশিয়ে তা চুলে দিন। সম্ভব হলে চুলে গরম পানির ভাপ দিতে পারেন। এ জন্য তোয়ালে গরম পানিতে ডুবিয়ে নিন। এরপর এর পানি ঝরিয়ে মাথায় জড়িয়ে রাখুন। ১০ মিনিট পর চুল ধুয়ে ফেলুন। হাত পায়ের নখে অলিভ ওয়েল ম্যসাজ করলে নখ ভাঙ্গা রোধ হয়।
যাঁদের কোলস্টেরলের মাত্রাটা বেশি, তাঁদের জন্য জলপাই তেলের কোনো বিকল্প নেই। বিভিন্ন রান্নায় ও সালাদে এই তেল ব্যবহারে স্বাদ ও পুষ্টি ২টাই বাড়ে বহুগুণ। যাঁদের ত্বকে চুলকানির সমস্যা রয়েছে, তাঁরা নির্দ্বিধায় এ তেল ম্যাসাজ করতে পারেন। শিশুর ত্বকেও নিরাপদ। জলপাই তেল মাথার ত্বকের খুশকি দূর করার জন্যও উপকারী।
বাদাম তেল:
পুষ্টি আর শক্তি—এ দুটো একসঙ্গে পেতে বেছে নিতে পারেন আমন্ড বা বাদাম তেল। চেহারায় লাবণ্য ছড়ায় এ তেল। মাথায় ব্যবহার করতে পারেন। শরীরে ম্যাসাজ করতে পারেন ময়েশ্চারাইজার হিসেবে। চিনাবাদামের তেল খেতেও পারেন বিস্কিট বা কেকের সঙ্গে বেক করে। তাছাড়া ব্যবহার করা যায় নানান রকম রান্নাতেও। চোখের নীচে কালি দূর করতে ও ব্যথা, ফোলা ও চুলকানি কমাতে সাহায্য করে এ তেলটি।
সূর্যমুখী তেল:
এই তেলের সুবিধা হলো, ত্বকে ব্যবহার করলে কোনো অস্বস্তিকর তেলতেলে অনুভূতি হয় না। ত্বক সজীব ও লাবণ্যময় করতে সূর্যমুখীর তেল ম্যাসাজ করতে পারেন। এছাড়া রান্নায় সয়াবিন তেলের বিকল্প হিশাবেও এই তেল খুবই স্বাস্থ্যকর।
নিম তেল:
যাঁদের ত্বকে ব্রণের সমস্যা আছে, তাঁরা নিম তেল ব্যবহার করতে পারেন। ব্রণের ওপর অল্প একটু তেল লাগিয়ে রাখুন, সেরে যাবে। দু-এক ফোঁটা নিম তেল খেতেও পারেন প্রতিদিন, চুলকানি রোধে সহায়ক হবে।
চমৎকার তথ্য ।
ReplyDelete